নকশি কাঁথা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, যা বিশেষভাবে গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি একধরনের কাঁথা বা কম্বল। এটি শুধু দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর একটি উপকরণ নয়, বরং বাঙালি নারীদের সৃজনশীলতা, সংস্কৃতি ও জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত।
নকশি কাঁথার পরিচয়:
-
অর্থ: “নকশি” মানে অলংকরণ বা ডিজাইন করা, আর “কাঁথা” মানে পুরনো কাপড় দিয়ে তৈরি হাত সেলাই করা চাদর বা কম্বল।
-
উৎপত্তি: এটি মূলত পুরনো শাড়ি বা ধুতির কাপড়গুলো স্তরে স্তরে সাজিয়ে সূচিকর্ম করে তৈরি করা হয়।
-
মূল স্থান: বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর এবং জামালপুরে এটি বেশি প্রচলিত।
নকশি কাঁথার বৈশিষ্ট্য:
-
হাতের সূচিকর্ম: সম্পূর্ণ হাতে সূচিকর্ম করা হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও পরিশ্রমসাধ্য।
-
চিত্র ও গল্প: এতে ফুল, লতা-পাতা, মাছ, পাখি, মন্দির, গ্রামীণ দৃশ্য, সামাজিক অনুষ্ঠান এমনকি জীবনের নানা গল্প ফুটে ওঠে।
-
রঙ ও ডিজাইন: সাধারণত উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি কাঁথার নকশা একেবারেই ভিন্ন ও অনন্য।
-
উপাদান: পুরনো সুতির কাপড় (শাড়ি, লুঙ্গি ইত্যাদি) ও রঙিন সুতা।
সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
-
শিল্পরূপ: এটি বাঙালি নারীর নিজস্ব শিল্পের প্রকাশ।
-
সমাজচিত্র: নকশির মধ্য দিয়ে সমাজ ও সংসারের নানা ঘটনা, সুখ-দুঃখ, ইতিহাস ফুটে ওঠে।
-
লোকসাহিত্য: নকশি কাঁথাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে জসীম উদ্দীনের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “নকশী কাঁথার মাঠ”, যা এই শিল্পকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে।
আধুনিক ব্যবহার:
বর্তমানে নকশি কাঁথা শুধু ঘরের কম্বল বা চাদর হিসেবে নয়, বরং:
-
ওয়াল হ্যাংগিং
-
কুশন কাভার
-
থলে (ব্যাগ)
-
পোশাক ও গৃহসজ্জার উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।